গবেষণা বলছে, ঘন ঘন ইয়ার-ফোন ব্যবহারে কানে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ঘটে। তো এখন নিশ্চয়ই আলাদা করে উল্লেখ কারতে হবে না যে অন্যকে ইয়ার-ফোন ব্যবহার করতে দেওয়ার অর্থ হলো খারাপ ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়ানো এবং তা থেকে কানে ইনফেকশনের ঝুঁকি বৃদ্ধি করা। তাই স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য ইয়ার-ফোনের মতো কিছু ব্যক্তিগত জিনিস অন্য কাউকে ব্যবহার করতে দেওয়া অথবা অন্যেরটা ব্যবহার না করা বুদ্ধিমানের কাজ।
আমরা এমন ১১টি জিনিসের তালিকা তৈরি করেছি যা কখনোই অন্যকে ব্যবহার করতে দেওয়া উচিৎ নয়।
১. নেইল কাটার
আঙুল এবং নখের বিশাল পরিমাণ ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং ছত্রাক জাতীয় অণুজীবের উপস্থিতি আমাদের খালি চোখে ধরা পড়ে না। তাই দেখতে খুব নিরহ হলেও নেইল কাটার হলো ইনফেকশন তৈরির কারখানা। তাছাড়া ফাঙাল ডিজিজ এবং HPV (হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস) এ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তো থাকছেই।
২. কানের দুল
কানে অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রক্তনালী থাকে। তাই বন্ধুকে কানের দুল ব্যবহার করতে দিলে তার থেকে রক্তরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বহুলাংশে বেড়ে যায়। যদি আপনি বন্ধুর দুল কানে দিতে চান তাহলে আগে অ্যালকোহলে ধুয়ে ব্যবহার করবেন।
৩. লিপ বাম বা লিপস্টিক
আমাদের মুখগহ্বর হাজার রকম জীবাণুর অভয়ারণ্য। এই জীবাণু ছাড়াও অনেক ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র রক্তনালীর উপস্থিতি রয়েছে এখানে। তাই মুখের এই অংশ থেকে জীবাণু সহ যেকোনো কিছু রক্ত প্রবাহে নিয়ে যেতে এক পায়ে দাঁড়িয়ে। তাই অন্যের লিপ বাম বা লিপস্টিক ব্যবহার বা অন্যকে নিজেরটা ব্যবহার করতে দিলে কোনো লক্ষণ প্রকাশ ছাড়াই হারপিস ভাইরাসের মত মারাত্মক জীবাণুর সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
৪. ভ্রুর চিমটা
ভ্রু প্লাক করতে অন্যের চিমটা ব্যবহারেও রোগাক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। বাড়তি ভ্রু উপড়ে ফেলার সময় রক্ত বেরিয়ে যেতে পারে এবং সেই রক্ত ভবিষ্যতের কোনো ভয়াবহ রোগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে খুব সহজেই। এমন অবস্থায় ভ্রুর চিমটা হেপাটাইটিস সি এবং এইচআইভির মত জীবাণু সংক্রমণের হাতিয়ার হিসাবে কাজ করে। যদি অন্যের চিমটা ব্যবহার বা অন্যকে নিজের চিমটা দেওয়ার বিকল্প না থাকে তাহলে অ্যালকোহলে ধুয়ে নিতে ভুলবেন না।
৫. বল ডিওড্রেন্ট
বগলে সুগন্ধির ব্যবহার নতুন নয়। এর জন্য বল ডিওড্রেন্ট পাওয়া যায় বাজারে। বগল পরিষ্কারের সময় অনেকের চামড়া কেটে যাওয়া বা ছোট ছোট ফুসকুড়ি উঠতে দেখা যায়। আর বল ডিওড্রেন্ট শুধু সুগন্ধই তৈরি করে এমন নয়, কাটা ক্ষত বা ফুসকুড়ির জীবাণু বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখে। তাই বল ডিওড্রেন্ট অন্যকে দেওয়াও ঠিক নয় এবং অন্যেরটা ব্যবহারও উচিৎ না।
৬. সাবান
সাবান ব্যবহারের পর এর উপর যে হালকা আস্তরণ দেখা যায় তাতে শুধু ফ্যানাই থাকে না, মারাত্মক কিছু ভাইরাসেরও উপস্থিতি পাওয়া যায় সেখানে। আবার অনেক সময় সাবানগুলো ভেজা ভেজা থাকতে দেখা যায়, যা ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাই, এবং ভাইরাস জন্মানোর উপযুক্ত পরিবেশ। ইনফেকশনের হাত থেকে বাঁচতে চাইলে অন্যকে ব্যবহার করতে দেওয়া বা অন্যের সাবান ব্যবহারে যেমন সতর্ক হওয়া প্রয়োজন, তেমনি শক্ত সাবানের বদলে বোতলবন্দি তরল সাবান ব্যবহারের চেষ্টা করতে হবে।
৭. চিরুনি
অন্যকে চিরুনি ব্যবহার করতে দেওয়াই যাবে না। এতে উকুন, খোসপাঁচড়া এবং ইনফেকশনে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। অন্যের চিরুনি বা অন্যকে নিজের চিরুনি ব্যবহার করতে দিলে ব্যবহারের আগে সেনিটাইজার দিয়ে ভালো মতো ধুয়ে নিতে হবে। সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে চিরুনি অন্যকে ব্যবহার করতে না দেওয়া অথবা অন্যের চিরুনি ব্যবহার না করা।
৮. তোয়ালে বা গামছা
তোয়ালে বা গামছা হচ্ছে জীবাণুর স্বর্গ, বিশেষ করে যখন তা গোসলখানার আর্দ্র আবহাওয়ায় টানানো থাকে। আপনার তোয়ালে থেকে বাসি গন্ধ আসলে ধরে নেবেন সেখানে মোল্ড এবং ব্যাকটেরিয়ার ব্যাপক ফলন হয়েছে। অন্য জন তো পরের কথা এই তোয়ালে ব্যবহার করলে এর মালিকও ফুসকুড়ি, ব্রণ এবং চোখ ওঠার মত গুরুতর সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন। এই ঝুঁকি থেকে বাঁচতে ৪-৫ বার ব্যবহারের পরই তোয়ালে ধুয়ে ভালো ভাবে শুকিয়ে আবার ব্যবহার করুন।
৯. মাজুনি
মাজুনি কখনোই পুরোপুরি শুকিয়ে যাওয়ার মত সুযোগ পায় না। এরাও তোয়ালে বা গামছার মতো জীবাণু উৎপাদনে শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে। প্রতিবার ব্যবহারের আগে নিশ্চিত হয়ে নিন আপনার মাজুনি ভালোভাবে শুকিয়েছে এবং প্রতিদিন আপনার গোসলখানায় আলো বাতাসের সুযোগ করে দিন।
১০. প্রসাধনী সামগ্রী
একজন মানুষের মুখমণ্ডলের ত্বক সবচেয়ে বেশি দুষিত থাকে। আর তাই মেকআপ ব্রাশের সাথে চোখের পানি, নাকে শ্লেষ্মা, লালা, রক্ত অথবা ব্রণের পুঁজও লেগে থাকার সম্ভাবনা প্রবল। তার মানে অন্যের আইলাইনার, আই শ্যাডো, মাসকারা, কনসিলার, মেকআপ বেজ এবং লিপস্টিকের মতো সামগ্রী ব্যবহার করা আর ক্ষতিকর জীবাণুদের “আহো ভাতিজা আহো” বলে ডেকে আনা সমান কথা।
১১. ইয়ার-ফোন
অন্যের ইয়ার-ফোন ব্যবহার বা অন্যকে নিজের ইয়ার-ফোন ব্যবহার করতে দিলে কানে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণের শঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। ব্যায়াম বা জগিং করার সময় কানে হেডফোন রাখলে ঘাম এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে সেখানে ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। তখন কান থেকে স্ট্রেপটোকক্কাস এবং স্টেফাইলোকক্কাসের ব্যাকটেরিয়া ইয়ার-ফোনের মাধ্যমে আপনার ও অন্যের কানে ঢুকে ইনফেকশন ঘটাতে পারে।
এই লেখা পড়ার পর ব্যক্তিগত জিনিস অন্যকে দেওয়া অথবা অন্যের ব্যক্তিগত জিনিস ব্যবহারে সতর্ক হবেন নিশ্চয়ই।