অনেকেই মনে করেন হাঁসের মাংস হাই ক্যালোরি এবং তৈলাক্ত খাবার বলে শীতের সময় বেশি স্বাদ লাগে। তবে সমস্যা হচ্ছে হাঁসের মাংস শক্ত ও রান্না করতে সময় লাগে বলে অনেকে হাঁসের মাংস রান্না করতে চান না। কিন্তু হাঁসের মাংস ভালোভাবে রান্না করতে পারলে খেতে ভীষণ মজা। তাই আজ আপনাদের জন্য রইল হাঁসের মাংসের চার পদ।
হাঁসের গ্রিল কাবাব
উপকরণ:
একটা হাঁস
হাফ কাপ পেঁয়াজ বাটা
দুই চামচ আদা বাটা
দুই চামচ রসুন বাটা
ঝাল বুঝে লাল গুড়া মরিচ
এক চামচ হলুদ
গরম মশলা বাটা (চার/পাঁচটে এলাচি, কয়েক টুকরা দারুচিনি, জয়ত্রী, সামান্য জয়ফল )
এক চামচ জিরা
দুই চামচ টমেটো সস
ভিনেগার ২ চামচ
এক চামচ চিনি
এক চামচ কাবাব মশলা (বাজারে প্যাকেটে পাওয়া যায়। এতে রং ও স্বাদ বেড়ে যাবে তবে না থাকলে নাই)
পরিমাণ মতো লবণ
পরিমাণ মতো তেল
প্রস্তুত প্রণালি:
হাঁস পরিষ্কার করে নিন। তারপর উপরে উল্লেখিত সব মশলা পাতি দিয়ে (তেলসহ) ভালো করে হাসটি মেখে নিন। লবণ দিতে ভুলবেন না।
হাঁসের ভিতরে বাইরে যেন ভালো করে মশলা লেগে যায়। এভাবে প্রায় ঘণ্টা খানেক রেখে দিতে পারেন। ম্যারিনেটেড। এতে মশলা মাংসে ভালো করে লেগে যাবে। চাইলে কয়েকটা কাঁচা মরিচ দিতে পারেন।
এবার একটা ফ্রাই প্যানে সামান্য তেল নিয়ে ভালো করে গরম করে হাঁসটিকে হালকা ভেজে নিন। এটা এজন্য যে, এতে হাঁসের মাংস নরম হয়ে যাবে, প্লাস স্বাদ বেড়ে যাবে। বেশি নয়, এপাশ ওপাশ করে হালকা ভাজা।
এবার হাঁসটিকে ইলেকট্রিক ওভেনের ট্রেতে তুলে দিন। বেচে যাওয়া মশলাগুলো ফ্রাই প্যানের তেলে দিন এবং সামান্য কষিয়ে হাঁসের উপর বিছিয়ে দিন। এবার ওভেনে ২০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রটে ওভেনের মাঝামাঝি আধা ঘণ্টার জন্য দিন। মাঝে মাঝে দেখতে ভুলবেন না।
কেমন পোড়া পোড়া কাবাব বানাবেন এটা আপনার উপর নির্ভর করছে। মিনিট বিশেকে না হলে আরো কিছুক্ষণ রাখতে পারেন। বার দুয়েক খুলে তেল মশলা কাবাবের উপর দিয়ে দিন।
মাংস নরম হল কি না তা দেখে নিন। ছুরি চামচ দিয়ে দেখতে পারেন। ভিতরে না বাইরে আরো আগুনের আঁচ লাগবে তা দেখে নিতে পারেন। যদি ভিতরে আগুনের আঁচের দরকার হয় তবে ট্রে নামিয়ে দিন। আর উপরে লাগলে ট্রে উপরে উঠিয়ে দিন। এতে সঠিক মাত্রায় কাবাবের চারপাশ নরম হয়ে যাবে।
হাঁসের মাংস একটু শক্ত বলে নিজেই দেখে নিবেন। ব্যস, হয়ে গেল হাঁসের মাংসের গ্রিল কাবাব। পরিবেশনের জন্য প্রস্তুত।
হাঁসের মাংসের কালিয়া
উপকরণ:
একটা হাঁস, এক কেজি বা বেশী (চমড়া ফেলা হয় নাই)
পেঁয়াজ কুঁচি, হাফ কাপের বেশী
দারুচিনি, এক ইঞ্চি, ৩/৪ পিস
আদা বাটা, দুই টেবিল চামচ
রসুন বাটা, দেড় টেবিল চামচ
লাল মরিচ গুঁড়া, এক চা চামচ (ঝাল বুঝে)
হলুদ গুঁড়া, এক চা চামচের কিছু কম
লবণ পরিমাণ মতো (প্রথমে কম লবনেই শুরু করতে হবে)
তেল পরিমাণ মতো (বা হাফ কাপের কম)
পানি (অতিরিক্ত কিছু পানি গরম করে রাখাই উত্তম)
বিশেষ মিক্স মশলা গুঁড়া
(নিচের মশলাগুলো কড়াইতে টেলে গুঁড়া করে নিতে হবে)
জয়ত্রি, সামান্য
জিরা, দুই চিমটি
এলাচি, মাঝারি ৪/৫ টা
লবঙ্গ, ৮/৯ টা
শুকনা মরিচ, ৩/৪ টা মাঝারি
মেথি, দুই চিমটি
তেজপাতা, বড় একটা
পাঁচ ফোঁড়ন, দুই চিমটি
গোল মরিচ গুঁড়া, দুই চিমটি
প্রস্তুত প্রণালি:
কড়াইতে তেল গরম করে প্রথমে পেঁয়াজ কুঁচি দিন, সাথে দিন সামান্য লবণ এবং দারুচিনি। ভাঁজুন, আগুন মিডিয়াম আঁচে রাখুন। পেঁয়াজ কুঁচি একটু হলদে হয়ে এলে আদা ও রসুন বাটা দিন এবং ভাঁজুন।
এবার লাল মরচ গুঁড়া এবং হলুদ গুঁড়া দিন। এক কাপ পানি দিন এবং ভালো করে মিশিয়ে নিন। ভালো করে কষালে তেল উপরে উঠে আসবে। তেল উপরে উঠে এলে ধুয়ে রাখা হাঁসের মাংস দিয়ে দিন।
ভালো করে নেড়ে মিশিয়ে নিন। আগুন মিডিয়াম আঁচে থাকবে। কিছুক্ষন পরে এক কাপ গরম পানি দিন এবং আবারো মিশিয়ে নিন।
মাংস নরম না হলে আরো এক কাপ পানি দিতে পারেন এবং আগুন মাধ্যম আঁচে রেখে ঢাকনা দিন। চুলার ধার ছেড়ে যাবেন না, মাঝে মাঝে নাড়িয়ে দিন।
তবুও মাংস নরম না হলে আবার গরম পানি দিতে পারেন। এবার সেই বিশেষ মিক্স মশলা দিয়ে দিন এবং ভালো করে নাড়িয়ে মিশিয়ে নিন।
ঢাকনা দিয়ে মাঝারি আঁচে রাখুন আরো কিছু সময়। একটু শুকনো মাখা মাখা হলে খেতে বেশি স্বাদ হয়। এবার চুলা থেকে নামিয়ে কিছু সময়ের জন্য রাখুন। পরিবেশনের জন্য প্রস্তুত।
টমেটো দিয়ে হাঁসের ঝাল ভুনা
উপকরণ:
হাঁস ১টি
পেঁয়াজ বাটা ১ কাপ
আদা বাটা ৩ চা চামচ
রসুন বাটা ৩ চা চামচ
লাল গুড়া মরিচ (ঝাল বুঝে)
হলুদ ১ চা চামচ
গরম মশলা পরিমাণ মতো
এলাচ ৪/৫টি
কয়েক টুকরো দারুচিনি
জিরা ১ চা চামচ
টমেটো কুচি ২/৩টি
কাঁচা মরিচ কয়েকটি
ভিনেগার ১ চা চামচ
চিনি হাফ চা চামচ
লবণ পরিমাণ মতো
তেল পরিমাণ মতো
পানি পরিমাণ মতো
প্রণালি:
তেল গরম করে পেঁয়াজ কুচি ভালোভাবে ভেজে এতে গরম মশলা, আদা, রসুন এবং সাথে কয়েকটা কাঁচামরিচ ও সামান্য লবণ দিয়ে ভেজে নিন।
এবার এতে গুড়া মরিচ, হলুদ এবং জিরা যোগ করে হাফ কাপ পানি দিয়ে কষিয়ে নিন। এরপর টমেটো কুচি দিয়ে দিন। সবগুলো ভালোভাবে কষিয়ে এবার হাঁসের মাংস দিয়ে দিন এবং ভাল করে মিশিয়ে নিন।
ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখুন এবং মাঝে মাঝে নেড়ে দিন। মাংস নরম না হলে আরো পানি দিতে পারেন। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। মাংস সিদ্ধ হয়ে গেলে সামান্য কিছু বেরেস্তা উপরে দিয়ে নামিয়ে নিন।
গরম ভাত বা পোলাওয়ের সাথে পরিবেশন করুন হাঁসের ভুনা।
হাঁসের মাংসের ঝাল কারি
উপকরণ:
হাঁস ১ টা
পেয়াজ কুচি ২ টা
পেয়াজ বাটা ৪ টে: চামচ
রসুন বাটা ২ টে: চামচ
আদা বাটা ২ টে: চামচ
হলুদ গুরা ১ টে: চামচ
মরিচ গুরা ১ টে: চামচ
জিরা গুরা ১ ১/২ টে: চামচ
দারচিনি ১ ইঞ্চি ৩ টুকরা, এলাচি ২ টা, লবঙ্গ ২ টা একসাথে বাটা
তেজপাতা ২ টা
তেল ১/২ কাপ
দারচিনি ১ ইঞ্চি ২ টুকরা
এলাচি ২ টা
রসুন থেঁতো করা ৫-৬ কোয়া
চিনি ১/৪ চা চামচ
লবণ পরিমান মতো
শুকনা মরিচ ১০ টা বিচী ফেলে শুধু খোসাগুলো গরম পানিতে ২ মিনিট ফুটিয়ে মিহি করে বেটে নেওয়া (এটা তরকারীর রং সুন্দর লাল হওয়ার জন্য কিন্তু ঝাল হবে না)
প্রনালি:
হাঁস কেটে ধুয়ে ভালো করে পানি ঝরিয়ে পেয়াজ বাটা, রসুন বাটা, আদা বাটা, হলুদ গুড়া, মরিচ গুড়া, জিরা গুড়া, মরিচের পেস্ট, লবণ, চিনি, ১ টা তেজপাতা, ২ টে: চামচ তেল দিয়ে মাখিয়ে রাখুন ১/২ – ১ ঘণ্টা।
এবার একটি প্যানে তেল গরম করে পেয়াজ কুচি গুলো বাদামী করে ভেজে ২ চা চামচ মতো তেলসহ একটি বাটিতে তুলে রাখুন।
এখন বাকি তেল টুকু দিয়ে তাতে একটা তেজপাতা, ১ ইঞ্চি ২ টুকরা দারচিনি ও ২ টি এলাচি ফোড়ন দিয়ে তাতে রসুন থেঁতো দিয়ে নাড়ুন।
রসুন হালকা লাল হলে তাতে মাখানো মাংস দিয়ে ভালো করে নেড়ে মধ্যম আঁচে ঢেকে রান্না করুন। ৫ মিনিট পর চুলার আঁচ কমিয়ে অল্প আঁচে রান্না করুন যতক্ষন না মাংস সেদ্ধ হয়।
মাংস সেদ্ধ হয়ে গেলে ভালো করে কসিয়ে আপনার যতোটুকু ঝোল রাখার ইচ্ছা সেই পরিমান মতো পানি দিন এবং প্যানটি ঢেকে দিন।
ফুটে উঠে ঝোল পরিমান মতো হলে এবং তেল উপরে উঠলে তেলসহ পেয়াজ বেরেস্তা দিন এবং দারচিনি, এলাচি, লং বাটা দিয়ে নেড়ে ঢেকে দিন এবং অল্প আঁচে আরো ২ মিনিট রেখে চুলা বন্ধ করে দিন।
১০-১৫ মিনিট পর ঢাকনা খুলে পরিবেশন পাত্রে নিন।