আধুনিক পুষ্টিবিদগণ পরামর্শ দিয়ে থাকেন যে, নিজের শরীরকে কঠোর ডায়েট এর মাধ্যমে কষ্ট না দিয়ে, স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ এবং নিয়মিত ব্যায়ামের জুড়ি নেই! বিশেষজ্ঞরা ইতিমধ্যে খাদ্যের পুষ্টিগুণ সম্পন্ন শ্রেণীভিত্তিক তালিকা প্রস্তুত করেছেন। আমরা সবাই পুষ্টিগুণসম্পন্ন খাদ্যগুলোকে কম বেশি জানি। শুধু তাই নয় যে সকল খাদ্য গ্রহণে স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্ভাবনা থাকে সেগুলো আমরা চিনি! আজ আপনাদের সামনে এমন কিছু খাদ্যের কথা তুলে ধরছি যেগুলো আপনি স্বাস্থ্যকর মনে করলেও বাস্তবে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর!
১০. মিষ্টি দই বা লস্সি বা মিল্ক শেক!
পুষ্টিগুণ সম্পন্ন দুগ্ধজাত পণ্য গুলো কখনোই মিষ্টি হয় না। অবশ্যই দই আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী, তবে সেটা খেতে হবে চিনি এবং ফ্রুট এডিটিভস ছাড়া! স্টার্চ এবং থিকেনার বা ঘন করার উপাদান বর্জিত দ্রব্য গ্রহণ করতে পুষ্টিবিদরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। পাশাপাশি তাজা বেরি, মসলা এবং ভ্যানিলা নির্যাস আপনার প্রাকৃতিক দই এর সাথে যুক্ত করতে পারেন!
৯. ভাত!
এটা বলা হয়ে থাকে যে, চাল আর রুটির মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য নেই! পুষ্টিগত দিক থেকে বললে, সাদা ভাতে প্রচুর পরিমাণে শর্করা থাকে যা খুব সহজেই আপনাকে স্থূল বা মোটা করে তুলবে! পুষ্টিবিদরা বলে থাকেন অবশ্যই আপনার শরীরের জন্য ভালো! তবে সেটা উচ্চ গুণসম্পন্ন হতে হবে!
৮. সুগন্ধি গুল্ম!
সুগন্ধি জাতীয় খাবারে ব্যবহৃত উদ্ভিদগুলো সত্যিকার অর্থেই মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে! জেনে অবাক হবেন, এ ধরনের সুগন্ধি উদ্ভিদগুলোর দেহে নাইট্রাইট রয়েছে যা ৩০ মিনিটের মধ্যে সোজা কোথায় বিষে পরিণত হয়! এজন্য পুষ্টিবিদরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন, সুগন্ধি কোন উদ্ভিদ খাবারের ঠিক দু এক মিনিট আগে সালাদে ব্যবহার করা উচিত! এর ফলে তার শরীরের জন্য ক্ষতিকর হবে না!
৭. চাটনি বা সসেস!
আপনি কি কখনো বাড়িতে তৈরি করা টমেটো সস এবং বাজার থেকে কেনা সসের পার্থক্য লক্ষ্য করেছেন! অবশ্যই লক্ষ্য করারই কথা! বাজারে যে সকল সস পাওয়া যায় এগুলোতে রাসায়নিক উপাদান এবং ক্ষতিকর রং তৈরি কারক উপাদান এবং চিনি মেশানো হয় যার ফলে স্বাস্থ্যের জন্য বেশ ক্ষতিকর!
৬. শুকনা ফল এবং ফলের চিপস!
যারা স্বাস্থ্যকর খাবার বা ডায়েট অনুসরণ করে থাকেন তাদের কাছে ফলের চিপস এর জনপ্রিয়তা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে, কিন্তু বেশিরভাগ প্রস্তুতকারী এই ফলের চিপস গুলোকে অনেকটা আলুর চিপস এর মত করেই প্রস্তুত করে থাকে! ফলের চিপসগুলোকে তারা তেলের উপর ভাজে। এজন্য সবজি অথবা ফলের চিপসগুলো পটেটো আলুর চিপস এর মতই বেশি পরিমাণে ক্যালরী ধারণ করে। এই চিপসগুলো সাধারণত দেখতে এবং খেতে অসাধারণ, এজন্য আমরা প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় শুকানোর আগে রাসায়নিক উপাদান এর মিশ্রণকে ধন্যবাদ দিতে চাই! আশা করি বুঝতে পারছেন, কেন আপনার এগুলো বর্জন করা উচিত!
৫. আঙ্গুর
এটা শুনতে অদ্ভুত লাগতে পারে যে আঙ্গুরকে যতটা উপকারী ভাবা হয় ততটা নয়! এর কারণ হচ্ছে আঙ্গুরের মিষ্টির স্বাদ আমাদের প্রচুর আঙ্গুর একসাথে খেয়ে ফেলার প্ররোচনা দেয়! যার ফলশ্রুতিতে আমাদের শরীরে হঠাৎই চিনির পরিমাণ প্রচন্ড বৃদ্ধি পায়! পুষ্টিবিদরা বলে থাকেন যে, সরাসরি প্রচুর পরিমাণে আঙ্গুর ভক্ষণ না করে অন্যান্য খাদ্যের সাথে এদের সমন্বয় করে গ্রহণ করা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী! তবে আঙ্গুরকে কখনোই চর্বিযুক্ত কোন খাবার, মাছ, তাজা শসা, তরমুজ, ডিয়ার অথবা খাবারের সাথে গ্রহণ করা উচিত নয়।
৪. ভুল ভাবে রান্না করা মাছ!
মাছ বলতে গেলে ক্ষতিকর চর্বি উপাদান থেকে একদমই মুক্ত! পাশাপাশি মাছে রয়েছে উপকারী ওমেগা থ্রি নামক ফ্যাটি এসিড। হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক জনপ্রিয় মাছের রেসিপি গুলোকে গবেষণা করে এই মর্মে উপনীত হয়েছেন যে, ভাজা এবং পোড়া মাছের চেয়ে সেদ্ধ কিংবা রান্না করা মাছে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে উপকারী উপাদান গুলো সঞ্চিত থাকে। আমেরিকার হৃদ রোগ বিশেষজ্ঞরা দাবি করেন যে, ভাজা, ওরা এবং লবণাক্ত মাছগুলো সত্যিকার অর্থেই বিপদজনক!
৩. ভুট্টা
বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর, বিজ্ঞানীরা একটি উপসংহারে এসে পৌঁছেছেন যে প্রক্রিয়াজাত ভুট্টা স্থলজ এবং জলজ প্রাণীদের প্রভাবিত করে! তারা এটাও দেখেছেন যে প্রক্রিয়াজাত ভুট্টার রেনুতে এক ধরনের ক্ষতিকর বিষ রয়েছে! বিভিন্ন দেশে এ ধরনের ভুট্টাকে ইতিমধ্যে নিষিদ্ধ করা হয়েছে! এক্ষেত্রে আপনার জন্য পরামর্শ হচ্ছে টিনজাত ভুট্টা এবং অন্যান্য টিনজাত পণ্য ভক্ষণ থেকে বিরত থাকুন। সবচেয়ে ভালো হচ্ছে, নিজেই সেদ্ধ করে এবং তৈরি করে কোন কিছু খাওয়া!
২. নাট মিল্ক বা বাদাম জাতীয় শস্য থেকে তৈরি দুধ!
কাজুবাদাম, নারিকেল অথবা অন্য কোন নাট বা বাদাম জাতীয় শস্য থেকে তৈরি দুধে অতিরিক্ত চিনি এবং সুগন্ধি থাকে, শুধু তাই নয় অতিরিক্ত ক্যালোরিও থাকে! এ ক্ষেত্রে এ ধরনের দুধ ক্রয় করার আগে বিষয়গুলোর সাথে পরিচিত হওয়া অত্যন্ত জরুরী। সবচেয়ে উত্তম হচ্ছে এ ধরনের দুধ নিজের ঘরেই প্রস্তুত করা।
১. রাইস কেক বা চাল হতে প্রক্রিয়াজাত কেক
বিভিন্ন ডায়েটে রাইস কেক অন্তর্ভুক্ত করা হয় যেহেতু এদের মধ্যে চর্বি তৈরিকারক উপাদান নেই বললেই চলে! বেশ কিছু বছর আগে জনপ্রিয় কিছু ম্যাগাজিন রাইস কেক এর পরিবর্তে রুটি গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছিল! দুর্ভাগ্যজনকভাবে, রাইস কে কে উচ্চ গ্লাইসেমিক সূচক বিদ্যমান, এর ফলে কেক গ্রহণের পরপরই আপনার দ্রুত ক্ষুধা লাগতে শুরু করে! ফলশ্রুতিতে আপনি যতটুকু প্রয়োজন তার চেয়ে বেশি ক্যালোরি সম্পন্ন খাবার খাবেন এবং আপনার ওজন বাড়বে!
বোনাসঃ বেশি পরিমাণে এভোকাডো স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর!
যদিও বাংলাদেশে সাধারণ মানুষের কাছে এই ফলের অতটা পরিচিতি নেই, তবে দেশের বড় বড় স্টোরগুলি বিভিন্ন ধরনের এভোকাডো বিক্রি করে থাকে এবং পুষ্টিবিদরা দাবি করে যে এই ফল শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তবে আমরা সেটার সাথে সরাসরি সম্মতি প্রদান করছি না! উল্লেখ যে এভোকাডোতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালোরি থাকে: ৩.৫ আউন্সের একটা এভোকাডোতে ২৪৫ কিলোক্যালোরি থাকে। তাই বেশি পরিমান এভোকাডো গ্রহণ মোটেও ভালো নয়।
মনে রাখবেন, শুধুমাত্র সরাসরি গাছ থেকে পেরে আনা এভোকাডোতেই সকল পুষ্টি উপাদান সঠিক মাত্রায় থাকে! বাজারের এভোকাডোগুলো কৃত্তিম তাপে প্রক্রিয়াজাত করা হয়,যা কম উপকারী! বেশি পরিমাণে এভোকাডো গ্রহণের ফলে প্রদাহ নাশক ওষুধের কার্যকারিতার বিরোধি উপাদান বেড়ে যেতে পারে এবং রক্তে লোহিত কণিকার পরিমাণ হ্রাস পেতে পারে!
এই তালিকার কোন খাদ্য কি আপনি খুব পছন্দ করেন! তাহলে আমাদের কমেন্টে জানাতে পারেন! সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।