একজন ডেন্টিস্ট বন্ধু থাকা ভালো, তাই না? যদিও তারা আপনাকে ফ্রি চিকিৎসা করবেন না কিন্তু দাঁতের যেন ক্ষতি না হয় সে বিষয়ে আপনাকে এমন সব পরামর্শ দেবেন যা হয়তো আপনি আগে জানতেনই না। আর আমাদের অজ্ঞানতার কারণে দাঁতের যত্নে খুব সামান্য ভুলও বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ডেন্টিস্ট বন্ধু যাদের নেই তাদের কী হবে? তাদেরও তো দাঁতের কথা ভাবতে হয়। হ্যা, আপনার যদি ডেন্টিস্ট বন্ধু না থাকে তাহলে কষ্ট পাবেন না। আমরা এখানে ডেন্টিস্টের দেওয়া ৮টি বিশেষ পরামর্শের কথা উল্লেখ করেছি। আশা করি নিরাশ হবেন না।
১. খেয়েই দাঁত ব্রাশ করবেন না
এভাবে দাঁতের এনামেলে নষ্ট হওয়া সবচেয়ে বেশি (বিশেষ করে যদি শক্ত টুথব্রাশ ব্যবহারে)। খাবার এবং পানীয় মুখের অম্ল-ক্ষারের ভারসাম্য নষ্ট করে এবং খুব অল্প সময়ের জন্য এনামেল নরম করে তোলে। তাই ডেন্টিস্টরা খাওয়ার অন্তত ৩০-৪০ মিনিট পর দাঁত ব্রাশ করার কথা বলেন।
২. সুইমিংপুলের পানি দাঁতের জন্য ক্ষতিকর
সুইমিংপুলে সাঁতার কাটা অবশ্যই স্বাস্থ্যকর। কিন্তু সমস্যা হলো, সুইমিংপুলের পানি জীবাণুমুক্ত করার জন্য যেসব কেমিকেল ব্যবহার করা হয় সেগুলো দাঁতের জন্য ক্ষতিকর। আশির দশকে, আমেরিকার গবেষকগণ পেশাদার সাঁতারুদের দাঁত নিয়ে এক গবেষণা করেছিলেন। তখন আবিষ্কৃত হয় যে, পেশাদার সাঁতারুদের ৪০% মারাত্মক দন্ত ক্ষয়ে আক্রান্ত ছিলেন।
৩. দ্রুত কফি খেতে হবে, ৩০ মিনিট বসে নয়
কাজ করতে করতে কফি বা চা খাওয়া দৃশ্যটা মনে করুন তো! আমরা মগ ভর্তি করে গরম কফি নেই এবং তাতে ছোট ছোট চুমুক দেই। যখন কফি আপনি (বিশেষ করে চিনিযুক্ত কফি) খেতে ব্যস্ত তখন চিনি আপনার দাঁতের এনামেল নষ্ট করার কাজ করে যাচ্ছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব কফি শেষ করে ফেলতে হবে।
৪. গর্ভধারণের আগে একবার ডেন্টিস্টের কাছে যাওয়া উচিৎ
প্রথমত, দাঁতের ক্ষয়জনিত গর্ত ইনফেকশনের খোলা ময়দান, যা দাঁত থেকে মাড়িতে এবং সেখান থেকে রক্তে প্রবেশ করে গর্ভের শিশুর জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এতে অকালে বাচ্চার জন্ম এবং তার জন্মগত রোগের সম্ভাবনা বাড়ে।
দ্বিতীয়ত, পেরিওডন্টাইটিস একটি মারাত্মক রোগ যা নারী পুরুষ উভয়েরই সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা নষ্ট করে দিতে পারে। গর্ভধারণ করলেও এ রোগে আক্রান্ত মায়েদের অকালে বা কম ওজনের শিশুর জন্ম দিতে দেখা যায়।
৫. গোসলের সময় বা টয়লেটে দাঁত মাজা উচিৎ না
দাঁতের যত্ন নেওয়ার প্রধানতম উপায় হলো তাদের ক্ষতির হাত থেকে বাঁচানো। এই প্রক্রিয়া খুব সতর্ক ভাবে অনুসরণ করতে হয়। এজন্য দাঁত ব্রাশ করার সময় অন্য কিছুতে ধ্যান দেওয়া উচিৎ নয়। এমনকি কোনো জরুরী কাজ যেমন গোসল করা টয়লেটে বসে দাঁত ব্রাশ করার যাবে না। দাঁত মাজাকেও গুরুত্ব দিয়ে দেখুন, আপনার ব্রাশ দাঁতের কোথায় কোথায় যাচ্ছে এবং কোথায় কোথায় ব্যথা বা অস্বস্তিকর অনুভূতি হচ্ছে সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।
৬. দাঁতের সাথে স্মৃতিশক্তির সংযোগ রয়েছে
৫৫ বছর বয়সী বা তার চেয়ে বয়স্ক ২৭৩ জন স্বেচ্ছাসেবী ব্যক্তিদের উপর চালানো এক গবেষণার ফলাফল থেকে জানা যায়, যাদের দাঁত নেই তাদের স্মৃতিশক্তি কমে যায়, মেজাজ মর্জি ভালো থাকে না এবং অস্থির প্রকৃতির হয়ে ওঠে। এর কারণ হলো দাঁত পড়ে গেলে সেখানে যে স্নায়ুগুলো সক্রিয় ছিল তা আর মস্তিষ্কে সিগন্যাল পাঠায় না। এজন্যই ডাক্তাররা রোগীর দাঁত বাঁচানোর সর্বশেষ চেষ্টা করেন। আধুনিক যুগের অত্যাধুনিক প্রযুক্তিকে অবশ্যই ধন্যবাদ দিতে হয়, কারণ এখন শুধু দন্তমূল থাকলেই দাঁত আবার গড়ে দিতে পারেন ডেন্টিস্টরা।
৭. শিশুর ঠাণ্ডা লাগার সাথে তার দাঁতের পাটির সম্পর্ক আছে
বছরে দু একবার ঠাণ্ডা লাগা শিশুদের জন্য স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু যদি প্রায়ই ঠাণ্ডা লাগার প্রবণতা থাকে তাহলে সম্ভবত তার দাঁতের পাটিতে সমস্যা রয়েছে। যারা নাক দিয়ে ভালোভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস করতে পারে না বাধ্য হয়েই তাদের মুখ দিয়ে তা করতে হয়। সাধারণত অল্প বয়সেই মাথা সামনের দিকের হাড়ে সমস্যা তৈরি হয়ে থাকে, যেমন চোয়াল সামনের দিকে চলে আসা।
এই ক্ষেত্রে ডেন্টিস্টরা নাক ঠিক ঠাক আছে কিনা তা জানতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ডাক্তার দেখাতে বলেন। অন্যথায় তাদের দাঁতের পাটি ঠিক করার কাজে হাত দিতে হবে।
৮. বরফে কামড় দেবেন না এবং জিহ্বা ফোঁড়াবেন না
যদি বরফ (অথবা শক্ত বাদামজাতীয় খাবার) কামড়ানোর অভ্যাস থাকে তাহলে তা আপনার দাঁত ও মাড়ি উভয়েরই ক্ষতি করছে। এতে দাঁতের এনামেল খুব বাজে ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেকে আবার জিহ্বা ফোঁড়ানোর ফ্যাশন করেন। এটিও দাঁতের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে।
আর দাঁত দিয়ে শক্ত জিনিস যেমন বোতলের কর্ক, খাবার প্যাকেট ইত্যাদি খোলার অভ্যাসও ত্যাগ করতে হবে।