প্রতিদিন আমাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রতঙ্গ নানা কাজে ব্যস্ত থাকে। আমাদের মস্তিষ্ক সারাদিন হাজার হাজার তথ্য নিয়ে কাজ করে, আমাদের হৃদপিণ্ড রক্তসঞ্চালন নিয়ে ব্যস্ত থাকে তেমনি প্রতিটি অঙ্গই এরকম নির্দিষ্ট কাজে ব্যস্ত থাকে।
সমস্যা হচ্ছে আমরা প্রতিদিনের জীবনযাপনে এইসব অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কাজে বিভিন্নভাবে ব্যঘাত সৃষ্টি করি। একারণে মাঝে মাঝেই আমাদের অঙ্গপ্রতঙ্গ সমূহ ঠিকভাবে কাজ করতে পারেনা। তারা তখন আমাদের সাথে বিভিন্নভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করে। অঙ্গপ্রতঙ্গ সমূহ আমাদের শরীরে বিভিন্ন লক্ষন দেখিয়ে আমাদেরকে তাদের খারাপ অবস্থার কথা জানায়।
আমরা সবসময় তাদের সেই লক্ষণগুলো বুঝতে পারিনা। আর একারনেই আমাদের অঙ্গপ্রতঙ্গ সমূহের অবস্থা দিনদিন আরও খারাপ হয়। কিন্তু সঠিক সময়ে সঠিক সমস্যাগুলো ধরতে পারলেই কিন্তু আমরা আরও বেশী সুস্থ থাকতে পারি এবং আরও বড় জটিলতাগুলো এড়াতে পারি।
আজকে আমরা ১০টি লক্ষনের কথা ফাপরবাজে উল্লেখ করছি। যে ১০টি লক্ষন দেখলে বুঝতে হবে আমাদের কিডনি সঠিকভাবে কাজ করছেনা।
১। ঘুমের সমস্যা হলে
যখন কিডনি ঠিকমতো কাজ করেনা তখন আমাদের শরীর থেকে বর্জ্যপদার্থ সমূহ সবগুলো প্রস্রাবের সাথে বের হয়ে যেতে পারেনা। আর এই বর্জ্যপদার্থ সমূহ আমাদের শরীরে থেকে গিয়ে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করে। এই বিষক্রিয়ার ফলেই স্বাভাবিক ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে।
২। মাথা ব্যাথা, অবসন্নতা এবং দুর্বলতা
ঠিকমতো কাজ করলে কিডনি আমাদের শরীরে ভিটামিন ডি উৎপন্ন করে যা আমাদের হাড়কে সুগঠিত করে এবং EPO নামের একধরনের হরমোন তৈরি করে যা আমাদের শরীরে লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে সাহায্য করে। কিডনি ঠিকমতো কাজ না করলে এই দুই ধরনের উপাদানের অভাবে আমাদের শরীরে এনার্জি ও অক্সিজেনের অভাব হয়। ফলে মাথা ব্যাথা, অবসন্নতা এবং শারীরিক দুর্বলতা সৃষ্টি হয়।
৩। শুষ্ক এবং চুলকানি যুক্ত ত্বক
সুস্থ কিডনি আমাদের শরীর ও রক্ত থেকে বর্জ্যপদার্থ সমূহ বের করে দেয়। আর যথেষ্ট লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে সাহায্য করে। কিডনি ঠিকমতো কাজ না করলে রক্ত ও শরীর দুষিত হয় ফলে আমাদের ত্বক শুষ্ক এবং চুলকানি যুক্ত হয়ে যায়।
৪। দুর্গন্ধযুক্ত ঢেকুর এবং ধাতব স্বাদ পাওয়া
যখন রক্তে প্রচুর বর্জ্যপদার্থ জমে যায় তখন তা খাবারের স্বাদে প্রভাব বিস্তার করে এবং খাবার খেতে ধাতব স্বাদযুক্ত মনে হয়। আর রক্তে বিষক্রিয়ার কারণে দুর্গন্ধযুক্ত ঢেকুর আসতে থাকে।
৫। নিঃশ্বাসের দুর্বলতা
কিডনি ঠিকমতো কাজ না করলে নিঃশ্বাসের দুর্বলতা দেখা দেয়। আর এটি হয় মূলত দুটি কারণে। প্রথমত অতরিক্ত বর্জ্যপদার্থ সমূহ ফুসফুসে প্রবেশ করে নিঃশ্বাসে ব্যাঘাত ঘটায়। দ্বিতীয়ত শরীরে লোহিত রক্তকণিকার অভাবে অক্সিজেনের অভাব সৃষ্টি হয় ফলে নিঃশ্বাসের দুর্বলতা দেখা দেয়।
৬। গোড়ালি, হাত এবং পায়ে ফোলাফোলা ভাব তৈরি হওয়া
রক্তে প্রচুর বর্জ্যপদার্থ জমে গেলে শরীরে অতিরিক্ত সোডিয়াম জমে যায়। আর একারণে গোড়ালি, হাত এবং পায়ে ফোলাফোলা ভাব তৈরি হয়।
৭। পিঠে ব্যাথা দেখা দিলে
কিডনি ঠিকমতো কাজ না করলে পিঠে ব্যাথা দেখা দেয়। এছাড়াও পায়ে ব্যাথা দেখা দিতে পারে। কিডনিতে প্রচুর বর্জ্যপদার্থ জমে গেলে এই লক্ষণগুলো দেখা দেয়। আর এটি পলিসিস্টিক কিডনি রোগের সৃষ্টি করতে পারে।
৮। স্ফীত চোখ
চোখ স্ফীত হওয়ার পেছনে দায়ী হচ্ছে মূলত প্রস্রাবের সাথে অতিরিক্ত প্রোটিন বের হয়ে যাওয়া। কিডনি ঠিকমতো কাজ না করলে এটি শরীরে প্রোটিন ছড়িয়ে না দিয়ে প্রস্রাবের সাথে প্রোটিন বের করে দেয়। আর প্রোটিনের অভাবে চোখ স্ফীত হয়ে যায়।
৯। উচ্চ্ রক্তচাপ
শরীরের রক্ত সংবহনতন্ত্র এবং কিডনি একটি আরেকটির সাথে সম্পর্কযুক্ত। কিডনি ঠিকমতো কাজ না করলে তাই রক্তচাপের তারতম্য পরিলক্ষিত হয়।
১০। প্রস্রাবের পরিবর্তন
কিডনি মূলত আপনার শরীরের সকল বর্জ্য পদার্থ প্রস্রাবের সাথে বের করে দেয়। তাই প্রস্রাবের রং, গন্ধ এবং ফ্রিকোয়েন্সি পরিবর্তন কিডনির সমস্যাকে নির্দেশ করে। প্রস্রাব হলুদ হওয়া, প্রস্রাবের সাথে রক্ত আসা এবং ঠিকমতো প্রস্রাব না হওয়াকে তাই গুরুত্ব সহকারে দেখুন।
তথ্যসূত্রঃ BRIGHT SIDE