কেমিকেল মিশ্রিত কসমেটিক্স ব্যবহার করে ফর্সা হওয়া তো সম্ভব। কিন্তু এমনটা করতে গিয়ে ত্বকের যে বারোটা বেজে যায়, সে বিষয়ে কখনও ভেবে দেখেছেন? তাই একান্তই যদি স্কিন টোনের উন্নতি ঘটাতে চান, তাহলে বন্ধ করুন ফেয়ারনেস ক্রিমের ব্যবহার।
পরিবর্তে কাজে লাগাতে শুরু করুন বেসনকে। তাহলেই দেখবেন ত্বকের কোনও ক্ষতি ছাড়াই ধীরে ধীরে স্কিন টোনের উন্নতি ঘটতে শুরু করেছে। সেই সঙ্গে ত্বক হয়ে উঠবে তুলতুলে এবং প্রাণবন্ত। এখন প্রশ্ন হল, কীভাবে কাজে লাগাতে হবে বেসনকে? ত্বকের পরিচর্যায় সরাসরি বেসনের ব্যবহার সম্ভব নয়। তাই বেসনের সঙ্গে নানাবিধ প্রকৃতিক উপদানকে মিশিয়ে একটা ফেস প্যাক বানিয়ে নিতে হবে। তারপর সেটি লাগাতে হবে মুখে।
এইভাবে নিয়মিত যদি ত্বকের দেখভাল করতে পারেন, তাহলে সুন্দর ত্বকের অধিকারি হয়ে উঠতে দেখবেন সময় লাগবে না। সেই সঙ্গে ত্বকের উপর যেমন সূর্যের ক্ষতিকারক প্রভাব কম পরবে, তেমনি নানাবিধ ত্বকের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও যাবে কমে। তাহলে আর অপেক্ষা কেন, চলুন বেসনকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটানো সম্ভব, সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
১. বেসন এবং ভাতের ফ্যান:
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে ভাতের ফ্যানের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। আর যদি বেসনের সঙ্গে এই উপাদানটি মিশিয়ে ত্বকে লাগাতে পারেন, তাহলে তো কথাই নেই! সেক্ষেত্রে ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেতে সময়ই লাগে না। এক্ষেত্রে ২ চামচ বেসনের সঙ্গে পরিমাণ মতো ভাতের ফ্যান মিশিয়ে একটা পেস্ট বানিয়ে নিন।
তারপর ১০ মিনিট অপেক্ষা করে মিশ্রনটি ভাল করে মুখে লাগিয়ে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। সময় হয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন মুখটা। এইভাবে সপ্তাহে কম করে ৩-৪ দিন ত্বকের পরিচর্যা করলেই দেখবেন সুফল মিলতে শুরু করেছে।
২. বেসন এবং দই:
দইয়ে উপস্থিত ল্যাকটিক অ্যাসিড, ত্বকের উপরিংশে জমতে থাকা মৃত কোষের স্থরকে সরিয়ে ফেলে। আর যখন দইকে বেসনের সঙ্গে মিশিয়ে ত্বকে লাগানো হয়, তখন স্কিন টোনের উন্নতি তো ঘটেই, সেই সঙ্গে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পেতেও সময় লাগে না।
এক্ষেত্রে ২ চামচ দইয়ের সঙ্গে ২ চামচ বেসন মিশিয়ে একটি মিশ্রন বানিয়ে নিতে হবে। তারপর তা মুখে লাগিয়ে কম করে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। সময় হয়ে গেলে ঠান্ডা জল দিয়ে ভাল করে মুখটা ধুয়ে নিয়ে অল্প পরিমাণে মসেশ্চারাইজিং ক্রমি লাগিয়ে নিতে হবে মুখে।
৩. বেসন এবং মধু:
কালো ছোপ ছোপ দাগ কমিয়ে ফেলার পাশাপাশি ত্বকের হারিয়ে যাওয়া আদ্রতা ফিরিয়ে আনতে এবং স্কিনের উজ্জ্বলতা বাড়াতে এই ফেস প্যাকটির কোনও বিকল্প হয় না বললেই চসে। এই প্যাকটি বানাতে প্রয়োজন পরবে ১ চামচ মধু এবং ২ চামচ ময়দার।
এই দুটি উপাদান ভাল করে মিশিয়ে বানানো পেস্ট মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। যখন দেখবেন পেস্টটা একেবারে শুকিয়ে গেছে, তখন ঠান্ডা জল দিয়ে ভাল করে মুখটা ধুয়ে, পছন্দের কোনও সিরাম মুখে লাগিয়ে নিতে হবে।
৪. ময়দা এবং ডিমের কুসুম অংশ:
ডিমের অন্দরে উপস্থিত প্রোটিন এবং উপকারি অ্যামাইনো অ্যাসিড ত্বকের অন্দরে প্রবেশ করে এত মাত্রায় পুষ্টির ঘাটতি দূর করে যে, যে কোনও ধরনের দাগ মিলিয়ে যেতে সময় লাগে না। আর যখন ডিমকে বেসনের সঙ্গে মিশিয়ে ত্বকের পরিচর্যায় কাজে লাগানো হয়, তখন আরও বেশি উপকার পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে স্কিন সেলের উৎপাদন বেড়ে যায়। ফলে ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেতে সময় লাগে না।
এখন প্রশ্ন হল কীভাবে বানাতে হবে এই ফেস প্যাকটি? একটা ডিমের কুসুম সংগ্রহ করে ভাল করে তা ফেটিয়ে নিতে হবে। তারপর তাতে ১ চামচ বেসন মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর একটি ব্রাশের সাহায্যে এই মিশ্রনটি ভাল করে লাগিয়ে ফেলতে হবে সারা মুখে। ২০ মিনিট অপেক্ষা করে ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে মুখটা।
৫. বেসন এবং পেঁপে:
পরিমাণ মতো পেঁপে নিয়ে তাতে ২-৩ চামচ ময়দা মিশিয়ে বানাতে হবে এই ফেস মাস্কটি। পেস্টটি বানানো হয়ে গেলে সারা মুখে ভাল করে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। সময় হয়ে গেলে ধুয়ে ফেলতে হবে মুখটা। এই ফেস মাস্কটিকে কাজে লাগালে ত্বকের অন্দরে বিটা-হাইড্রক্সি অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়তে শুরু করবে। ফলে যে কোনও ধরনের দাগ মিলিয়ে যেতে সময় লাগবে না। সেই সঙ্গে ডার্ক সার্কেল কমবে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।
৬. ময়দা এবং হলুদ:
ব্রণর প্রকোপ কামনোর পাশাপাশি ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটানোর পাশাপাশি নানাবিধ স্কিন ডিজিজকে দূরে রাখতে এই ফেল মাস্কটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই অল্প দিনেই যদি সুন্দর ত্বক পেতে চান, তাহলে সম পরিমাণে বেসন, হলুদ এবং গোলাপ জল মিশিয়ে একটা পেস্ট বানিয়ে নিন। তারপর সেটি মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন মুখটা। প্রসঙ্গত, সপ্তাহে ৩-৪ দিন যদি এই ঘরোয়া টোটকাটিকে কাজে লাগাতে পারেন, তাহলেই দেখবেন কেল্লাফতে!