হোয়াইট ডিসচার্জ বা সাদা স্রাব মাঝে মাঝেই সমস্যায় ফেলে দেয় । সময়মতো চিকিৎসা না করালে যার পরিণতি ভয়ঙ্কর হতে পারে । চলে আসতে পারে বন্ধ্যাত্বও । এই সমস্যা নিয়ে এ বার আলোচনা করছি ।
প্রথমেই বলি সাদা স্রাব মানেই খারাপ নয় । নাক দিয়ে সর্দি পড়ার মতো শরীরের যে কোনও অংশ থেকে সিক্রেশন হতে পারে । তেমনই জরায়ুমুখ বা সার্ভিক্স থেকেও এক রকম সিক্রেশন হয় । একদম জলের মতো । কোনও দুর্গন্ধ থাকে না । সাধারণত দুটো পিরিয়ডের মাঝে ওভ্যুলেশনের সময় এই রকম তরল ডিসচার্জ হতে পারে । এটি স্বাভাবিক ব্যাপার । এতে শরীরি মেলামেশায় অসুবিধা হয় ।
কিন্তু জলের মতো না হয়ে অন্য কোনও রঙের স্রাব বেরোলে চিকিৎসার কথা ভাবতে হবে । কারণ জননঅঙ্গের ইনফেকশনের জন্য এরকম স্রাব বেরোয় । একে বলে পেলভিক ইনফ্ল্যামেটরি ডিজিস বা পিআইডি ।
কীভাবে হয় এই ইনফেকশন :
যৌন মেশামেশি থেকে হয় । শরীরী মেলামেশার সময় স্বামীর থেকে স্ত্রীর বা স্ত্রীর থেকে স্বামীর ইনফেকশন হতে পারে । অন্য যে কোনও অপারেশনের মতো স্ত্রীরোগের যে কোনও অপারেশনের পর ইনফেকশন হতে পারে । এমনকি গর্ভপাত করালেও বা প্রসবের পরও ইনফেকশনের সম্ভাবনা থাকে ।
কীভাবে বুঝবেন এই সমস্যা হয়েছে :
১) দুর্গন্ধযুক্ত সাদা , হলুদ , খয়েরি বা সবুজ রঙের স্রাব বেরোলে ।
২) চুলকানি হলে ।
৩) তলপেটে অসম্ভব ব্যথা হলে ।
৪) শারীরিক মেলামেশার সময়ে গোপনাঙ্গে ব্যথা হলে ।
৫) দুই পিরিয়ডের মাঝখানে ইন্টারকোর্সের সময়ে রক্তপাত হলে ।
৬) শরীরে সব মিলিয়ে একটা ভাল না-লাগার অনুভূতি হলে ।
৭) জ্বরও আসতে পারে ।
মেয়েদের সাদা স্রাব কমানোর কিছু ঘরোয়া সমাধান :
১) আমলকী – তিন গ্রাম আমলকী গুঁড়োর সঙ্গে ছয় গ্রাম মধু এক সঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন । অথবা ২০ গ্রাম আমলকী রসের সঙ্গে আধ চা চামচ মধু মিশিয়ে নিন । টানা এক মাস দিনে দু’বার করে এই মিশ্রণ খেলে উপকার পাবেন ।
২) কলা – রোজ সকালে এক কাপের দুধের মধ্যে এক চমচ মধু মিশিয়ে খান । সঙ্গে একটা কলা । কাঁচকলা সেদ্ধ বা যে কোনও রান্নায় কাঁচকলা দিয়ে খেলেও উপকার পাবেন । দুটো পাকা কলার সঙ্গে তিন টেবিল চামচ মধুর মিশ্রণ বানিয়ে নিন । এই মিশ্রণ দিনে দুই থেকে তিন বার খেলেও কমবে হোয়াইট ডিসচার্জ ।
৩) বেদানা – রস করেই খান বা চিবিয়ে খান , বেদানা দারুণ উপকারী । শুধু ফল নয় । বেদানা পাতাও উপকারী । ৩০টা বেদানা পাতার সঙ্গে গোটা গোলমরিচ মিশিয়ে জলে মেশান । ছেঁকে নিন । টানা তিন সপ্তাহ সকালে এই জল খেলে উপকার পাবেন ।
৪) শুকনো আদা গুঁড়ো – দুই চা চামচ শুকনো আদা গুঁড়ো ২৫০ মিলি জলে ফুটিয়ে নিন । যত ক্ষণ না জল ঘন হয়ে অর্ধেক হয়ে যায় । টানা তিন সপ্তাহ আদা জল খেলে উপকার পাবেন ।
৫) তুলসি – মধু ও তুলসি পাতার রস এক সঙ্গে মিশিয়ে রোজ সকাল-বিকেল টানা দু’সপ্তাহ খান । এক চা চামচ তুলসি পাতার রস , জিরে গুঁড়ো , দুধের দুধে মিশিয়ে তিন সপ্তাহ ধরে খান । মিছরির সঙ্গে তুলসি পাতার রস খেলেও উপকার পাবেন ।
৬) ফিটকিরি – তুলসির মতোই ভাল অ্যান্টিসেপটিক ফিটকিরি । সিকি চামচ ফটকিরি গুঁড়ো জলে মিশিয়ে দিনে দু’বার খেলে ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ কমে যাবে ।
৭) ঢেঁড়স – এক লিটার জলের মধ্যে ২০০ গ্রাম ঢেঁড়স সেদ্ধ করুন । জল ঘন হয়ে অর্ধেক হয়ে আসবে । টানা এক সপ্তাহ দিনে দুই থেকে তিন বার এই জল খান ।
৮) ভাতের ফ্যান – ভাতের ফ্যান নিয়মিত খেলেও কমে যায় হোয়াইট ডিসচার্জ । ফ্যান ভাত খেতে পারেন রোজ। তবে এতে কিন্তু ওজন বাড়ে ।
৯) মেথি – এক চামচ মেথি জলে ভিজিয়ে সারা রাত রেখে দিন । সকালে জল ছেঁকে এর মধ্যে আধ চামচ মধু মিশিয়ে খেয়ে নিন ।
১০) পেয়ারা – এক লিটার জলে কয়েকটা পেয়ারা পাতা ফুটিয়ে জল অর্ধেক করে নিন । ছেঁকে নিন । এই জল দিনে দু’বার খেলে শুধু হোয়াইট ডিসচার্জ নয় , অনেক ইনফেকশনও কমে যাবে।