নিঃশব্দ ঘাতক নামে পরিচিত এই রোগ ওভারি ক্যান্সার। কারণ এই মারাত্মক রোগটির লক্ষণগুলো খুব সহজে চোখে পড়ে না। নারীদের স্বাভাবিক জীবনের একটি অংশ বলেই মনে হয়ে থাকে এই ধরণের ক্যান্সারের লক্ষণগুলো। যখন থেকে এই লক্ষণগুলো নজরে পড়া শুরু হয় তখন বেশ দেরিই হয়ে যায়। বলতে গেলে তখন এই রোগটি চিকিৎসার বাইরে চলে যায়। ডাক্তারদের মতে মাত্র ২০% রোগীর লক্ষণ ধরা এবং চিকিৎসার মাধ্যমে ঠিক করা সম্ভব হয়ে উঠে। তাই এই ক্যান্সারের লক্ষণগুলো নারীদের জেনে রাখা খুব জরুরী, যাতে প্রাথমিক পর্যায়েই ধরে ফেলা যায় এই নীরব ঘাতকটিকে। আজকে চলুন জেনে নেই এই নীরব ঘাতক রোগ ‘ওভারিয়ান ক্যান্সারের’ লক্ষণগুলো।
১) তলপেট ব্যথা হওয়া
মেয়েদের তলপেট ব্যথা হওয়ার অনেক কারণই রয়েছে, যার ফলে এই ক্যান্সারের কারণে হওয়া তলপেট ব্যথাটা খুব আলাদাভাবে শনাক্ত করা যায় না। কিন্তু সাধারণভাবে এটি মাসিকের ব্যথা, বদহজম বা ফ্লু জনিত ব্যথা থেকে অনেক ভিন্ন ধরণের হয়ে থাকে। এছাড়াও প্রায় ২ সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে তলপেটে ব্যথা অনুভব করলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
২) বদহজম বা হজমে সমস্যা
বদহজম বা হজমে সমস্যা আমরা খুব স্বাভাবিক একটি বিষয় বলেই ধরে থাকি। কিন্তু পেটে গ্যাস হওয়া, বদহজম, বমি ভাব, বুক জ্বালাপোড়া ও অন্যান্য হজমজনিত সমস্যা ওভারিয়ান ক্যান্সারের লক্ষণ বলে ধরেন ডাক্তারগণ।
৩) ক্ষুধা মন্দা ভাব
কোনো সঠিক কারণ ছাড়াই খাবার খেতে অনীহা, ও খাবার খেতে সমস্যা হওয়া ওভারিয়ান ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। কারণ ক্যান্সারের কোষ পরিপাকতন্ত্রের উপর প্রভাব ফেলে যার ফলে হজমে সমস্যা শুরু হয়, এতে করে খাবার খেতে অনীহা প্রকাশ করেন অনেকেই।
৪) ঘন ঘন প্রস্রাব
হঠাৎ করেই প্রস্রাবের মাত্রা বেড়ে যাওয়া এবং মাঝে মাঝে কাপড়েই টয়লেট করে দেয়ার মতো সমস্যা যদি শুরু হয় তাহলে অনেক সতর্ক থাকুন। কারণ ওভারিয়ান ক্যান্সার ব্লাডারের কর্মক্ষমতা একেবারেই নষ্ট করে দেয় যার ফলে প্রস্রাব নিয়ন্ত্রণে থাকে না। এবং এই অবস্থা ১ সপ্তাহের মধ্যে আরও মারাত্মক আঁকার ধারণ করতে পারে।
৫) অল্প খাবারেই পেট ভর্তি মনে হওয়া
এই লক্ষণটি ওভারি ক্যান্সারের অ্যাডভান্সড লক্ষণ। কারণ ক্যান্সারের টিউমার পাকস্থলীর নিচের অংশে যখন জায়গা করে ফেলে তখন অল্প খাবারেই পাকস্থলী ভর্তি হয়ে আসে। এতে করে অল্প খাবার খেলেই রোগী মনে করেন অনেক পেট ভর্তি হয়ে গিয়েছে।
৬) কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়রিয়া দেখা দেয়া
ব্লাডার, পরিপাকতন্ত্রের কর্মক্ষমতা একেবারে নষ্ট হয়ে যায় যার ফলে এই অঙ্গগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না। আর তাই হুট করেই কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়রিয়ার সমস্যা দেয়া দেয়।
৭) মেরুদণ্ডের নিচের অংশে ব্যথা
টানা অনেকদিন যাবত মেরুদণ্ডের নিচের অংশে ব্যথা হওয়া অর্থাৎ লোয়ার ব্যাক পেইন হওয়া ওভারি ক্যান্সারের লক্ষণ। অনেক রোগী এই ব্যথার সাথে লেবার পেইনের তুলনা খুঁজে পান।
৮) হুট করেই ওজন কমে যাওয়া
ওভারি ক্যান্সারের প্রথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে হুট করেই ওজন কমে যাওয়া। কোনো ধরণের ডায়েটিং বা শারীরিক বড় কোনো পরিশ্রম ছাড়াই প্রায় ১০ বা তার বেশি পাউন্ড ওজন কমে যাওয়ায় খুশি হয়ে যাবেন না। দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন।
৯) যৌনাঙ্গ থেকে রক্তপাত হওয়া
মাসিক বা অন্য কোনো আঘাত ব্যতীত অর্থাৎ কোনো সঠিক কারণ ছাড়াই যৌনাঙ্গ থেকে রক্তপাত হওয়া ওভারি ক্যান্সারের লক্ষণ। এছাড়াও যৌনাঙ্গে ব্যথাযুক্ত ফোঁড়া, চামড়ার রঙ পরিবর্তন ও ঘন স্রাব হওয়ার মতো সমস্যাতে দেরি না করে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন।