সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রতিদিন মাছ, ফল ও সবজি খাওয়া উচিত।
কিন্তু, ভয়ঙ্ককর ব্যাপার হচ্ছে, মাছ, ফল ও সবজি সুস্বাস্থ্যের পরিবর্তে উল্টো আমাদের স্বাস্থ্যহানি করে।
বাজারের বেশিরভাগ ফল ও শাক-সবজি রাসায়নিকে ভরপুর।
কিন্তু, আমরা তা অনুধাবন করতে না পারায় অনিচ্ছাকৃতভাবে হলেও প্রতিদিন বিষ খেয়ে চলেছি।
মাছ, ফল ও শাক-সবজিতে ব্যবহৃত রাসায়নিকের ফলে বিভিন্ন রোগ হতে পারে।
তাই আজ আসুন আমরা জেনে নেই কীভাবে ঘরোয়া পদ্ধতিতে মাছ, ফল ও সবজি থেকে বিষ দূর করতে পারবেনঃ
মাছঃ
১ ঘণ্টা মাছ পানিতে ডুবিয়ে রাখলে শতকরা ৬০ ভাগ ফরমালিন নষ্ট হয়ে যায়।
সবচেয়ে ভালো হয় ভিনেগার মিশ্রিত পানিতে ১৫ মিনিট মাছ ডুবিয়ে রাখলে শতকরা ১০০ ফরমালিন নষ্ট হয়ে যায়।
মাছের শরীর থেকে ফরমালিন দূর করতে মাছটি অন্তত ১ ঘণ্টা ঠাণ্ডা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন।
পরীক্ষায় দেখা গেছে, এতে করে মাছের শরীরে যে ফরমালিন থাকে, সেটি প্রায় ৬১ শতাংশ কমে গেছে।
আরও একটি কার্যকর উপায় হলো, মাছটি রান্না করার আগে কমপক্ষে ১ ঘণ্টা লবণ পানিতে ডুবিয়ে রাখা।
এতে করে মাছের ফরমালিনের পরিমাণ প্রায় ৯০ শতাংশ কমে যাবে।
আরেকটি কার্যকর পদ্ধতি হচ্ছে, আপনি যখন চাল ধুবেন এবং প্রথম বার চাল ধোবার সময় যে পানি বের হবে সেটি দিয়ে প্রথমে মাছটি ধুয়ে নিন।
এরপর আবার সাধারণ পানি দিয়ে ধুবেন। দেখবেন এতে করে প্রায় ৭০ শতাংশ ফরমালিন দূর হয়ে যাবে।
আমাদের দেশে এখন শুঁটকি মাছেও প্রচুর পরিমাণে ফরমালিন মেশানো হচ্ছে।
শুঁটকি মাছ থেকে ফরমালিন দূর করতে ঠিক একই রকম পন্থা অবলম্বম করবেন।
প্রথমে ১ ঘণ্টা লবণ মিশ্রিত হালকা গরম পানিতে পরে ১০ মিনিট ঠাণ্ডা পানিতে ডুবিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলুন।
এতে করে ফরমালিন তো দূর হবেই পাশাপাশি মাছের স্বাদও বাড়বে।
সবজিঃ
সবজি রান্না করার আগে ১০ মিনিট লবণ গরম পানিতে ডুবিয়ে রাখুন।
সবজিকে ফরমালিনমুক্ত করার সব চাইতে ভালো পদ্ধতি হলো- ভিনেগার ও পানির মিশ্রণে
(পানিতে ১০% আয়তন অনুযায়ী) ১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখা।
এতে প্রায় ১০০ ভাগ ফরমালিন দূর হয়।
কোনো ফলমূল খাবার আগে সেটি হালকা গরম এবং লবণ মিশ্রিত পানিতে ১০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন।
এতে করে ফরমালিনের পরিমাণ প্রায় ৯৮ শতাংশ দূর হবে।
অনেক সময় ফলমূলে বিশেষ করে আম, লিচুতে স্প্রে করার মাধ্যমে ফরমালিন দেয়া হয়।
সেজন্য গাড় বা উজ্জল রঙের ফল কেনা থেকে বিরত থাকুন।
এছাড়া কিছু কিছু কাজ করে নিতে পারেন
খাবারের ফরমালিন দূর করার জন্য।
গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিনঃ
বাজার থেকে যেকোনো ধরনের ফল ও সবজি কেনার পর তা খাওয়ার আগে গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।
বেশি গরম বা ঠাণ্ডা পানি সম্পূর্ণভাবে রাসায়নিক দূর করে না।
তাই হালকা গরম পানি ব্যবহার করুন।
ফল ও সবজির ওপরে থাকা মোম, আঠা ও অন্যান্য রাসায়নিক ধুয়ে দূর করে দিতে পারে উষ্ণ গরম পানি।
লবণ পানি দিয়ে ধুয়ে নিনঃ
একটি বড় পাত্রের মধ্যে পানি নিয়ে তাতে আধা চা-চামচ লবণ মিশিয়ে সেই পানি দিয়ে ফল ও সবজি ধুয়ে নিন।
লবণ-পানি দিয়ে ধোয়ার পর আবার পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।
ভিনেগার মিশ্রিত পানিতে ডুবিয়ে রাখুনঃ
রাসায়নিক দূর করার সেরা সমাধান হচ্ছে- ভিনেগার মিশ্রিত পানিতে ফল ও সবজি ডুবিয়ে রাখা।
বড় একটি পাত্রে পানি নিয়ে ১ চা-চামচ ভিনেগার মিশিয়ে সেই পানিতে ফল ও সবজি ভিজিয়ে রাখুন।
কিছুক্ষণ পর কলের পানি দিয়ে আবার ধুয়ে নিন।
খোসা ফেলে দিনঃ
যেসব ফল ও সবজির খোসা ফেলে দেওয়া যায়, সেগুলোর খোসা ফেলে দিন। যেমন: পেঁয়াজ, আলু, অ্যাভাকাডো, আপেল, আদা, আম, গাজর, মূলা ইত্যাদি।
প্রথমত এসব ফল ও সবজি ধুয়ে নিন, তারপর খোসা ফেলে দিন।
খোসা ছাড়ানোর পর আবারো ধুয়ে নিন।
নিজস্ব ক্লিনার তৈরি করুনঃ
১ টেবিল-চামচ লেবুর রসে ২ টেবিল-চামচ বেকিং সোডা যোগ করে ভালোভাবে মেশান।
এবার এতে ১ কাপ পানি যোগ করুন। এই মিশ্রণটি ফল ও সবজিতে স্প্রে করুন।
পরবর্তীতে ব্যবহারের জন্য সংরক্ষণ করুন।
ভালো মতো মুছে নিনঃ
পানি দিয়ে ফল ও সবজি ধুয়ে ফেলুন, এরপর একটি পরিষ্কার কাপড় দিয়ে ফল ও সবজি
ভালো করে মুছে ফেলুন। তারপর খান।