বিখ্যাত কোমল পানীয় কোকাকোলা আমাদের শরীরের ভেতরে কীভাবে কাজ করে তা জানতে বেশ কিছুদিন ধরে গবেষণা করেছেন ফার্মাসিস্ট নিরাজ নায়েক । আর তিনি যা পেয়েছেন সেটা সত্যিই চিন্তিত এবং ভয় পাওয়ার কথা ।
যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম ডেইলি স্টার অনলাইন জানিয়েছে , কোকাকোলা খাওয়ার এক ঘণ্টা পর এটি শরীরের মধ্যে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে তা একটি গ্রাফের মাধ্যমে দেখানোর চেষ্টা করেছেন নিরাজ ।
সেখানে দেখা গেছে , প্রথম চুমুক দেওয়ার পর থেকে ৬০ মিনিট পর পর্যন্ত সাতটি ধাপে এই কোমল পানীয় শরীরের মধ্যে বিক্রিয়া করে । একটি ৩৩০ মিলিলিটারে এক ক্যান কোকাকোলা পানের মাধ্যমে ১০ চা চামচ পরিমাণ চিনি সরাসরি আপনার শরীরে প্রবেশ করে । যা প্রতিদিন গ্রহণযোগ্য চিনির পরিমাণের মাত্রার প্রায় আড়াই গুণ ।
বিষয়টি নিয়ে নিরাজ তাঁর নিজস্ব ব্লগে লিখেছেন , চিনির মাত্রাটা এতটা বেশি যে এটা সরাসরি গ্রহণ করলে যে কারো বমি পেয়ে যেতে পারে । কিন্তু কোকাকোলার ভেতরে থাকা ফসফরিক এসিড এই অতিরিক্ত মিষ্টি স্বাদকে হালকা করে দেয় ফলে আরামসে পানীয়টি গলধঃকরণ করেন আপনি ।
পুষ্টিবিদ ইলা এলার্ড মেট্রো ডেইলি স্টার অনলাইনকে বলেন , ‘‘‘ কোক সম্পর্কে এই ভয়ঙ্কর তথ্য আপনাকে চমকে দেবে। তবে এসব জানার কারণে উপকার যেটা হয়েছে সেটা হলো এখন থেকে কোকাকোলা পানের আগে সেটা ভেবে আপনি বিরত থাকবেন । ’’’
কোকাকোলা পানের এক ঘণ্টা পর পাঁচ ধাপে যা যা হয় –
শরীরের ভেতরে কোকাকোলার প্রতিক্রিয়া নিরাজ দেখিয়েছেন কয়েকটি ধাপে :
প্রথম ১০ মিনিট পরে :
১০ চা চামচ চিনি আপনার শরীরের ভেতরের ব্যবস্থাকে আঘাত করে । এটার অতিরিক্ত মিষ্টতার কারণে আপনি বমিও করে দিতে পারেন । কিন্তু এর রেসিপিতে থাকে ফসফরিক এসিড । আর এটাই অতিরিক্ত মিষ্টতা কমিয়ে দেয় যাতে আপনি এটা পান করতে পারেন ।
২০ মিনিট পরে :
আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায় আর ইনসুলিনের বিস্ফোরণ ঘটে । প্রচুর পরিমাণ চিনি যকৃতের মধ্যে চর্বি তৈরি করে ।
৪০ মিনিট পরে :
এই সময়ের মধ্যে ক্যাফেইন পুরোপুরি শোষিত হয়ে যায় । আপনার রক্তচাপ বাড়তে থাকে । এতে করে আপনার যকৃত বা লিভারে আরো চিনি ঢুকে পড়ে ।
৪৫ মিনিট পর :
এই সময় আপনার শরীরের ডোপামিন উৎপাদন বেড়ে যায় এবং আপনার মস্তিষ্কে উদ্দীপনা জাগায় । মাদক হেরোইন যেভাবে কাজ করে ঠিক সেভাবেই এটা আপনার ওপর কাজ করে ।
৬০ মিনিট পর :
আপনার শরীরের অন্ত্রের নিচের দিকে ক্যালসিয়াম , ম্যাগনেসিয়া ও জিংকের সাথে বিক্রিয়া করে ফসফরিক এসিড । যা বিপাককে হঠাৎ করে বাড়িয়ে দেয় । উচ্চমাত্রার চিনি ও কৃত্রিম চিনির কারণে রেচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্যালসিয়াম দেহ থেকে বের হয়ে যায় ।
কোকাকোলা পানের এক ঘণ্টা পর পাঁচ ধাপে যা যা হয় –
এই সময়ের পরে ক্যাফেইনের মূত্রবর্ধক বৈশিষ্ট্য কাজ করতে শুরু করে । এর মানে এই সময় আপনার প্রসাবের বেগ আসে । অর্থাৎ এবার প্রসাবের মাধ্যমে আপনার শরীর ও হাড় থেকে ক্যালসিয়াম , ম্যাগনেশিয়াম , জিংক , সোডিয়াম , ইলেকট্রোলাইট ও পানি বের হয়ে আসবে ।
এ সময় আপনি খিটখিটে হয়ে যেতে পারেন । কারণ কোকের সঙ্গে আপনি যেটুকু পানি গ্রহণ করেছিলেন সেটুকুও আপনার শরীর থেকে বের হয়ে গেছে ।
এ বিষয়ে ডেইলি স্টার অনলাইন কোকাকোলা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাদের এক মুখপাত্র বলেন , ‘ ১২৯ বছরেরও বেশি সময় ধরে মানুষ আনন্দের সাথে কোকাকোলা পান করে আসছে । অন্য সব কোমল পানীয়র মতো এটাও পানের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং সুষম খাদ্য হিসেবে গ্রহণের জন্য পুরোপুরি উপযুক্ত । ’