আমাদের প্রায় সকলেই ইউরিক এসিডের কথা শুনেছি কিন্তু আমাদের খুব কম সংখ্যক মানুষই এর প্রকৃত অর্থ কী তা জানি।
আপনার দেহের কোষগুলো প্রাকৃতিকভাবে ভেঙ্গে এবং আপনি যা খানে সে খাবার থেকেই উৎপাদিত হয় ইউরিক এসিড।
বেশিরভাগ ইউরিক এসিড কিডনির মাধ্যমে ফিল্টার হয়ে এবং পেশাবের সঙ্গে আমাদের দেহ থেকে বের হয়ে যায়।
পায়খানার সঙ্গেও সামান্য পরিমাণে ইউরিক এসিড আমাদের দেহ থেকে বের হয়ে যায়।
তবে, দেহে যদি অতিরিক্ত ইউরিক এসিড উৎপাদিত হয় এবং কিডনি যদি সেই অতিরিক্ত ইউরিক এসিডকে রক্ত থেকে বের করে দিতে না পারে তাহলে রক্তে এই এসিডের মাত্রা বেড়ে যায়।
ফলে দেহের জয়েন্টগুলোতে কঠিন পদার্থ- ক্রিস্টাল বা স্ফটিক তৈরি হয়।
যার ফলে জয়েন্টগুলোতে ব্যথা করে। আর একে বলা হয় গেঁটেবাত।
উচ্চ মাত্রায় ইউরিক এসিড উৎপাদিত হওয়ার ফলে কিডনিতে স্টোন বা পাথর এবং কিডনি ফেইলিওর বা বিকল হয়ে পড়তে পারে।
যাদের দেহে উচ্চহারে ইউরিক এসিড উৎপাদিত হয় সেসব রোগীদের জন্য খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কিত প্রচুর বিশেষ ধরনের পরামর্শ আছে।
তাদেরকে সাধারণত মদপান ও মিষ্টিজাতীয় খাদ্য কম খেতে বলা হয় এবং
পিউরিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন, মাংস, পোল্ট্রি, সামুদ্রিক খাদ্য এবং ডালজাতীয় খাদ্য কম খেতে বলা হয়।
পিউরিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পর পিউরিন হজম হয়ে ইউরিক এসিড তৈরি হয়।
এখানে রইল এমন কিছু খাদ্যের তালিকা যেগুলো খেলে ইউরিক এসিড উৎপাদন কমবে এবং
গেঁটেবাত ও কিডনি স্টোন থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।
১. পানি
দেহ থেকে ট্রক্সিন সহ অতিরিক্ত ইউরিক এসিড বের করে দেয় পানি।
এজন্য প্রতিদিন আপনাকে অন্তত ১০ থেকে ১২ গ্লাস পানি পান করতে হবে।
২. সবুজ শাকসবজি
সবুজ শাকসবজিতে থাকে ভিটামিন সি, যা আপনার দেহের এসিডিটি কমাতে সহায়ক এবং তা ইউরিক এসিডের মাত্রাও বাড়তে দেয় না।
সুতরাং প্রতিদিন যত বেশি সম্ভব সবুজ শাকসবজি খেতে হবে।
৩. ফ্ল্যাক্সসীড বা শ্বেতবীজ
এই বীজ এবং এর তেলে আছে ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড। যা স্ফীতি এবং প্রদাহ কমাতে সহায়ক।
৪. ফলমূল
আঙ্গুর, আনারস এবং চেরি ও বেরির মতো ফলে আছে প্রদাহরোধী উপাদান অ্যান্থোসায়ানিন।
যা ইউরিক এসিডের মাত্রা কমাতে সহায়ক।
এছাড়া ইউরিক এসিড থেকে ক্রিস্টাল উৎপন্ন হয়ে তা জয়েন্টে জমা হওয়াও প্রতিরোধ করে অ্যান্থোসায়ানিন।
৫. লেবু পানি
এতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ।
এতে আরো আছে সাইট্রিক এসিড যা ইউরিক এসিডের দ্রাবক। একগ্লাস পানিতে অর্ধেক লেবু চিপে রস বের করে তা পান করুন।
প্রতিদিন দুই বার এভাবে লেবু পানি পান করুন। তাহলেই আপনার দেহে ইউরিক এসিড এর মাত্রা ঠিক থাকবে।
৬. আপেল সিডার ভিনেগার
অনেকেই এই উপাদানটি ব্যবহার করেন ওজন কমানোর ডায়েটে।
কিন্তু খুব কম লোকেই জানেন এতে আছে বিস্ময়কর অ্যান্ট্রিঅক্সিডেন্ট এবং প্রদাহরোধী উপাদান। যা দেহে ইউরিক এসিডের মাত্রা কমিয়ে রাখতেও সহায়ক।
আপেল সিডার ভিনেগার অযাচিত ইউরিক এসিড দেহ থেকে পুরোপুরি ভেঙ্গে ফেলতে এবং অপসারণ করতে সহায়ক।
প্রতিদিন পানির সঙ্গে মিশিয়ে দুই থেকে তিনবার আপেল সিডার ভিনেগার পান করুন।
৭. গাজর, বিট এবং শসার জুস
গাজর জুস, বিট জুস এবং শসার জুস একসঙ্গে
মিশিয়ে খেলে রক্তে ইউরিক এসিডের উচ্চমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৮. স্বল্প চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত পণ্য
স্বল্প চর্বিযুক্ত দুধ ও দই খেলে রক্তে ইউরিক এসিড উৎপাদন কমে আসে।
৯. উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার
উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার রক্তের প্রবাহ থেকে অতিরিক্ত ইউরিক এসিড শুষে নেয় এবং
কিডনির মাধ্যমে দেহ থেকে ইউরিক এসিড বের করে দিতে সহায়ক ভুমিকা পালন করে।
ওটস, ব্রোকোলি, বার্লি, শসা, শস্যদানা এবং গাজরে আঁশ থাকে প্রচুর।
এছাড়া আপেল, পিয়ার্স, কমলা, স্ট্রবেরি এবং ব্লুবেরিও আঁশসমৃদ্ধ।
১০. গ্রিন টি
এই চা দেহকে বিষমুক্ত করতে বেশ কার্যকর।
প্রতিদিন গ্রিন টি পান করলে দেহে অতিরিক্ত ইউরিক এসিড উৎপাদনও কমবে।
ফলে গেঁটে বাত এবং কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকিও দূর হবে।