বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথেই মুখের ত্বক তার স্বাভাবিক নমনীয়তা এবং আর্দ্রতা হারাতে শুরু করে । যার প্রভাব দেখা দিতে থাকে মুখের ত্বকে । বিশেষ করে চোখের নীচের ত্বকে । কারণ , সময়ের সাথে সাথে চোখের নীচে কালো দাগ দেখা দিতে শুরু করে । যাকে বলা হয়ে থাকে ডার্ক সার্কেল । শুধুমাত্র বয়স বৃদ্ধির ফলেই নয় ডার্ক সার্কেল দেখা দিতে পারে আরও নানান কারণে । ঘুমের সমস্যা , মানসিক চাপ , অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস , স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা , অনেক বেশি সময় ধরে টিভি ও কম্পিউটার স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকার মতো কারণেও ডার্ক সার্কেল দেখা দিয়ে থাকে ।
অনেকেই জানেন যে , আলু চোখের নীচের এই কালো দাগ দূর করার ক্ষেত্রে বেশ উপকারী । তবে সঠিক উপায়ে আলু ব্যবহার না করলে ডার্ক সার্কেল কখনোই পুরোপুরিভাবে দূর হবে না । কীভাবে আলু ও আলুর সাথে অন্যান্য উপাদান মিশিয়ে ব্যবহার করলে ডার্ক সার্কেলের সমস্যা দূর করা সম্ভব হবে সেটা বর্ননা করা হলো ।
কাঁচা আলুর রস :
শুধু আলুর রসেই রয়েছে ভিটামিন – সি , এ এবং অন্যান্য এনজাইম । যা ত্বকের জন্যে উপকারী এবং ত্বকের কালো ভাব দূর করতে কাজ করে থাকে ।
যেভাবে ব্যবহার করতে হবে :
আলু ছিলে নিয়ে ভালোভাবে ছোট কুচি করে নিতে হবে । কুচি করা আলু থেকে ভালোভাবে চিপে রস বের করে নিতে হবে । এই রস এক ঘন্টার জন্যে রেফ্রিজারেটরে রেখে ঠাণ্ডা করতে হবে । এরপর এই রসে তুলার বল ভিজিয়ে নিয়ে চোখের নীচের অংশে তুলার বলগুলো রেখে দিতে হবে ১৫-২০ মিনিট সময়ের জন্য । এরপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে চোখ ধুয়ে নিয়ে তলায়ের সাহায্যে পানি শুকিয়ে নিতে হবে । প্রতিদিন একবারের জন্য এই পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে যতদিন না পর্যন্ত ডার্ক সার্কেল দূর হচ্ছে ।
আলুর স্লাইস :
ডার্ক সার্কেলের সমস্যা দূর করার জন্যে এটা অন্যতম সহজ একটি উপায় । এর জন্যে প্রথমে একটি আলু এক ঘণ্টার জন্যে রেফ্রিজারেটরে রেখে ঠাণ্ডা করে নিতে হবে । ঠাণ্ডা আলুর মাঝ বরাবর কেটে দুইটি পাতলা স্লাইস তৈরি করতে হবে । পাতলা করে কাটা এই আলুর স্লাইস দিয়ে ভালোভাবে দুই চোখ ঢেকে রাখতে হবে । খেয়াল রাখতে হবে , চোখের নীচের অংশ যেন ভালোভাবে আবৃত থাকে । এইভাবে ২০ মিনিট রেখে দেবার পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে চোখ ধুয়ে ফেলতে হবে । দ্রুত ফলাফল পেতে চাইলে এক দিনের মাঝে দুইবার আলুর স্লাইস এইভাবে ব্যবহার করতে হবে ।
আলু এবং শসার মিশ্রণ :
শসাতে রয়েছে কোলাজেন । যা এক ধরণের প্রোটিন । এই কোলাজেন ত্বককে টানটান করতে এবং ত্বকে উজ্জ্বলভাব তৈরি করতে সাহায্য অরে থাকে । এছাড়া , এতে রয়েছে প্রাকৃতিক অ্যাসট্রিজেন্ট , যা ত্বকের কালো দাগকে দ্রুত দূর করতে কাজ করে । একইসাথে শসার ৯৫ শতাংশ পানি বলে , এটা ত্বককে কোমল রাখতেও সাহায্য করে থাকে । আলু এবং শসা একইসাথে মিশিয়ে চোখের জন্য প্যাক তৈরি করলে সেট খুব ভালো কার্যকরী হয়ে থাকে ।
যেভাবে ব্যবহার করতে হবে :
একটি আলু গ্রেট করে সেটা থেকে রস তৈরি করে নিতে হবে । একটি শসার মাঝের নরম অংশ বের করে আলুর রসের সাথে মেশাতে হবে । এরপর এ মিশ্রণটি রেফ্রিজারেটরে রেখে দিতে হবে । ঠাণ্ডা হয়ে গেলে এই মিশ্রণটি চোখে মাখিয়ে ২০ মিনিট সময়ের জন্য রেখে দিতে হবে । নরম কাপড় কিংবা তুলার সাহায্যে চোখ থেকে মিশ্রণ তুলে এরপর ঠাণ্ডা পানির সাহায্যে চোখ ধুয়ে নিতে হবে । সপ্তাহে ৩-৪ বার এই পদ্ধতিতে মিশ্রণ ব্যবহার করতে হবে ।
আলু , মধু ও অলিভ অয়েল :
মধুতে রয়েছে প্রদাহ বিরোধী উপাদান সমূহ । যা ত্বককে আরাম প্রদান করে থাকে । এছাড়া অলিভ অয়েলে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমূহ , ভিটামিন সমূহ এবং প্রদাহবিরোধী উপাদান সমূহ যা ত্বকের জন্য খুবই উপকারী । একসাথে এই সকল উপাদান মেশানোর ফলে ত্বক ও চোখের ত্বকের জন্য উপকারী একটি মিশ্রণ তৈরি হয় ।
যেভাবে ব্যবহার করতে হবে :
একটি আলু টুকরা করে কেটে তার সাথে এক চা চামচ মধু এবং দুই চা চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে ভালোভাবে ব্লেন্ড করতে হবে । এরপরে ঘন পেষ্টের মতো মিশ্রণ তৈরি হবে । এই পেষ্ট চোখের নিচে ভালোভাবে মাখিয়ে ৩০ মিনিট সময়ের জন্য রেখে দিতে হবে । তবে খেয়াল রাখতে হবে চোখের ভেতরে যেন এই পেষ্ট প্রবেশ না করে । এরপর কুসুম গরম পানি দিয়ে চোখ ধুয়ে ফেলতে হবে । সপ্তাহে ৩-৪ বার ব্যবহার করতে হবে এই পেষ্ট ।
আলু ও লেবুর রস :
লেবুর রসে রয়েছে প্রাকৃতিক ব্লিচিং উপাদান , যা চোখের ডার্ক সার্কেল কমাতে সাহায্য করে থাকে । এছাড়া , ত্বককে উজ্জ্বল করতে , ত্বকে পুষ্টি জোগাতেও সাহায্য করে লেবুর রস ।
যেভাবে ব্যবহার করতে হবে :
একটি আলু ভালোভাবে ব্লেন্ড করে তাতে চার টেবিল চামচ পরিমাণ লেবুর রস মেশাতে হবে । এই মিশ্রণটি এক ঘন্টার জন্য রেফ্রিজারেটরে রেখে দিতে হবে । মিশ্রণ ঠাণ্ডা হয়ে গেলে চোখে মাখিয়ে ১৫ মিনিট সময়ের জন্য রেখে দিতে হবে । এরপর ঠাণ্ডা পানির সাহায্য চোখ ধুয়ে নিতে হবে । সপ্তাহে ৩-৪ বার এই পদ্ধতিতে চোখে মিশ্রণ ব্যবহার করতে হবে ।
আলু ও টমেটো :
টমেটোতে রয়েছে লেবুর রসের মতোই প্রাকৃতিক ব্লিচিং উপাদান । যা ত্বকের কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে এবং ত্বককে কোমল করে । এতে রয়েছে লাইকোপেন , যা এক ধরণের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট । এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ডার্ক সার্কেল কমাতে সাহায্য করে থাকে । একইসাথে টমেটোতে থাকা ভিটামিন – এ ত্বকের ক্ষত সারাতে সাহায্য করে থাকে ।
যেভাবে ব্যবহার করতে হবে :
একটি আলু ও একটি টমেটো কুচি করে কাটতে হবে । একইসাথে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে পেষ্ট তৈরি করতে হবে । তৈরিকৃত পেষ্ট চোখে ভালোভাবে মাখিয়ে ২০ মিনিট সময়ের জন্য রেখে দিতে হবে । ভালো ফলাফল পাবার জন্য একদিন পরপর এই পেষ্ট ব্যবহার করতে হবে ।
আলু ও কাঠবাদাম :
কাঠবাদামে থাকা প্রদাহ বিরোধী উপাদান চোখের নীচের ফোলাভাব দূর করতে এবং চোখের চারপাশের ডার্ক সার্কেল ভালো করতে সাহায্য করে থাকে । একইসাথে কাঠবাদামে রয়েছে প্যালমিটিক অ্যাসিড এবং রেটিনল । যা চোখের চারপাশের নরম ত্বকের জন্য বিশেষ উপকারী ।
যেভাবে ব্যবহার করতে হবে :
৩-৫ টি কাঠবাদাম সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে । সকালে ভিজিয়ে রাখা কাঠবাদাম এবং আলু ব্লেন্ডারে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিতে হবে । তৈরিকৃত মিশ্রণ তুলার বলের সাহায্যে চোখে মাখিয়ে ২০ মিনিট সময়ের জন্য রেখে দিতে হবে । এরপর ঠাণ্ডা পানির সাহায্যে চোখ ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে । দ্রুত ফলাফল পাওয়ার জন্যে একদিন পরপর এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে ।