“ তিন সপ্তাহের আগে গর্ভধারণের কথা কাউকে বলো না ! ” সাধারণত গর্ভধারনকারী নারীদের বয়স্ক মহিলারা এই উপদেশ দিয়ে থাকেন । হয়তো আপনি একে কুসংস্কার বলবেন । কিন্তু এর পেছনে লুকিয়ে আছে এক বৈজ্ঞানিক কারণ ও দূর্ঘটনার ভয় । অকাল গর্ভপাত বা মিসক্যারেজ ।
অকাল গর্ভপাত বা মিসক্যারেজ শব্দটির সাথে কম বেশী আমরা সবাইই পরিচিত । নতুন গর্ভবতী মায়েদের কাছে এটি একটি ভীষন আতঙ্কের দুঃস্বপ্নের নাম । সাধারনত মায়ের গর্ভে প্রাকৃতিক কারনে ভ্রুণের অকাল মৃত্যুকে অকাল গর্ভপাত বলে । এটা মানুষের গর্ভধারণ প্রক্রিয়ার একটি অন্যতম জটিলতার নাম ।
কিন্তু জেনে নিন গর্ভপাত সম্পর্কে এমন কিছু বিষয় যা আপনি আগে জানতেন না –
১। গর্ভপাতের হার আপনার ধারনার চেয়েও বেশী :
সাধারনত আমরা মনে করি, গর্ভপাত একটি দূর্ঘটনা এবং তা খুব কমক্ষেত্রেই ঘটে থাকে। কিন্তু আপনি কি জানেন প্রায় ১৫% গর্ভধারণই শেষ পর্যন্ত রূপ নেই গর্ভপাতে । এবং যদি প্রাথমিক প্রেগন্যান্সি টেস্টের আগের সময় থেকে ধরা হয়, তবে এই হার প্রায় ৩০% ।
২। গর্ভধারণের শুরুর দিকেই গর্ভপাত ঘটার সম্ভাবনা বেশী :
সাধারনত ডাক্তাররা হবু বাবা মা কে বলে থাকেন যাতে ২০ সপ্তাহের আগে প্রেগন্যান্সির খবর সবাইকে না বলা হয় , এমনকি গ্রামেও এটি সাংস্কৃতিক ভাবেই প্রচলিত । কারণ , সাধারনত গর্ভধারণের ১২ সপ্তাহের মধ্যেই গর্ভপাত হবার আশংকা বেশী থাকে । এর পরবর্তীতে রিস্ক কমে আসে ।
৩। গর্ভপাত হয়ে যেতে পারে আপনার অজান্তেই :
গর্ভধারনের প্রথম ১০ দিনের মাথায়ই আপনার অজান্তেই মিসক্যারেজ হয়ে যেতে পারে । রক্তপাত এর একটা খুব সাধারণ লক্ষণ । নারীরা একে পিরিয়ড ভেবে ভুল করতেই পারেন । কিন্তু যদি কখনো অতিরিক্ত রক্তপাত হয় , তবে ঝুঁকি না নিয়ে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন । গর্ভপাত না ঠেকাতে পারলেও অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা ও সংক্রমণ এড়াতে পারবেন ।
৪। গর্ভপাতে মায়ের কোন দোষ নেই :
অকাল গর্ভপাত ঘটে মূলত ভ্রুণের অস্বাভাবিকতার কারণে , এটা আগে থেকে নির্ণয় করা কঠিন আর এতে মায়ের কোন দোষ নেই ।
৫। বয়স্ক মহিলাদের ক্ষেত্রে গর্ভপাতের ঝুঁকি বেশী :
বয়স্ক মহিলাদের ক্ষেত্রে মিসক্যারেজের ঝুঁকি বেশি । কেননা ডিম্বানুর বয়েসের কারণে জিনগত অস্বাভাবিকতার হার বেড়ে যায় ।
৬। যৌনতার সাথে সম্পর্ক নেই :
আপনার যৌন জীবন , ব্যায়াম বা নিয়মিত হালকা কাজের সাথে অকাল গর্ভপাতের তেমন কোন সম্পর্কে নেই । তবে একটু সাবধান থাকা ভালো । কারণ , গর্ভধারণের প্রথম তিন মাসে আনপ্রোটেকডেট সেক্স করলে গর্ভপাতের হার বাড়ে ।
৭। গর্ভপাত একাধিকবার হতে পারে :
গর্ভপাত একবার হলে আবারো হতে পারে । তাই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন ।
৮। ফার্টিলিটির চিকিৎসা গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে :
সন্তান ধারনের জন্যে বেশি বয়েসে ফার্টিলিটির চিকিৎসা ও ঔষধ সেবনের কারনেও গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়তে পারে ।
৯। ধূমপান, প্রত্যক্ষ হোক বা পরোক্ষ :
প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ধূমপানের কারনেও হতে পারে গর্ভপাত । তাই নিজে ধূমপান তো করবেনই না এবং কোন ধূমপায়ীর আশেপাশে থাকা থেকে বিরত থাকুন ।
১০। অতিরিক্ত ওজনের কারণে হতে পারে গর্ভপাত :
অতিরিক্ত ওজনের কারণে নানা স্বাস্থ্য সমস্যার পাশাপাশি হতে পারে গর্ভপাতও ! যেমন ডায়াবেটিস , যা অতিরিক্ত ওজনের কারনেই হয়ে থাকে । এটি গর্ভপাতের একটি অন্যতম প্রধান কারণ ।
গর্ভপাতের অভিজ্ঞতা যেকোন নারীর ক্ষেত্রেই একটি দুঃখজনক বিষয় । তাই সাবধান থাকুন , সুস্থ থাকুন , সুস্থ রাখুন আপনার অনাগত অতিথিকেও !